ad

Friday, January 23, 2015

প্রকৃতির চিকিৎসাঃ বিভিন্ন শাকের ঔষধি গুণ......

প্রকৃতির চিকিৎসাঃ  বিভিন্ন শাকের ঔষধি গুণ......
শাকপাতার আছে অনেক ঔষধি গুণ। শাকও হতে পারে চিকিৎসা উপকরণ, দরকারি পথ্য...
কথায় বলে-মাংসে মাংস বাড়ে, ঘৃতে বাড়ে বল, দুধে শুক্র বাড়ে, শাকে বৃদ্ধি মল। শাক খেলে মল বাড়ে। তার মানে শাক খেলে পেট পরিষ্কার হয়। আমাদের সমাজে বিত্তবানরা শাককে গরিবের খাদ্য বলে মনে করেন। তারা শাক ও সবজিকে হেলাফেলা করেন। এই পুষ্টিসমৃদ্ধ শাক না খেয়ে তিন বেলা পোলাও, বিরিয়ানি, গোশত ও ঘি'যুক্ত খাবার খেয়ে উচ্চ রক্তচাপ, হূদরোগ ও কিডনি সমস্যা ও পেটের নানা অসুখে ভোগেন। ডাক্তার যখন ওই হাই প্রোটিন ও উচ্চ মাত্রার ক্যালোরিযুক্ত খাবার বর্জন করে শাক সবজি মাছ খেতে বলেন, তখন ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। তাই নিম্নে নানান শাকের গুণাগুণ বর্ণনা করা হলো:-
পুঁইঃ
-----
* সর্দি ও কোষ্ঠকাঠিন্য সারাতে দধি এবং পুঁইশাক সিদ্ধ করে খান।
* পুঁইপাতা থেঁতো করে ব্রণের ওপর প্রলেপ দিলে ব্রণ সেরে যায়।
* পুঁইশাকের সঙ্গে ছাগলের দুধ মিশিয়ে সাত দিন খেলে হুপিং কাশির প্রকোপ কমে।
* পুঁইপাতা ও ডাঁটা পুড়িয়ে ছাই করে দাঁত মাজলে দাঁতের পাইরিয়ায় চমৎকার ফল পাওয়া যায়।
লালশাক :
------------
লালশাক অত্যন্ত সহজলভ্য সস্তা শাক। ইচ্ছে করলে ছাদে বা অল্প জায়গায় লালশাকের বীজ বুনে এক মাসের মধ্যে খাওয়া যায়। টবে লাগিয়ে খাওয়া চলে। লালশাক রক্তে হিমোগেস্নাবিন বাড়ায়। যাদের রক্তস্বল্পতা বা এনিমিয়া আছে তারা নিয়মিত লালশাক খেলে রক্তস্বল্পতা পূরণ হয়। এতে লবণ বা ক্ষারের গুণ রয়েছে।
সর্ষেশাক :
-------------
সর্ষে শাকে প্রচুর পরিমাণে আমিষ ও স্নেহ জাতীয় ভিটামিন রয়েছে। এই শাক রক্তে উপকারী এইচডিএল কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে। দেহে ভিটামিন ডি তৈরীতে সাহায্য করে।
পালং শাকের পুষ্টি ও ভেষজগুণঃ
----------------------------------
পালং শাক শরীরের অন্ত্র সচল রাখতে সাহায্য করে। অন্ত্রের ভেতরে জমে থাকা মল সহজে বের করে দেয়। ডায়াবেটিস রোগীরা এই শাক পরিমাণমতো খেলে উপকার পান। এই শাকের বীজও খুব উপকারী। এর বীজের ঘন তেল কৃমি ও মূত্রের রোগ সারায়। পালং শাকের কঁচি পাতা ফুসফুস, কণ্ঠনালীর সমস্যা, শরীর জ্বালাপোড়া ইত্যাদি সমস্যা দূর করতেও ভালো কাজ দেয়। পালং শাক শরীর ঠান্ডা রাখে। জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য এই শাক বিশেষ উপকারী। এই শাককে বলা হয় রক্ত পরিষ্কারক খাদ্য। রক্ত বৃদ্ধিও করে। চোখের জ্যোতি বাড়ায় এবং মুখের লাবন্য বৃদ্ধি করে। পোড়া ঘায়ে, ক্ষতস্থানে, ব্রনে বা কোথাও কালশিরা পড়লে টাটকা পালং পাতার রসের প্রলেপ লাগালে ভালোই উপকার পাওয়া যায়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি, সি এবং ই পাওয়া যায়। এই শাকে আয়রন প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এজন্য পালং শাক খেলে রক্তে আয়রনের মাত্রা বেড়ে যায়
ধনে পাতার ভেষজগুণঃ
----------------------------
* ধনেপাতায় রয়েছে ভিটামিন ‘সি’ , ফলিক এসিড যা ত্বকের উপকারের জন্য যথেষ্ট প্রয়োজনীয়। এই ভিটামিনগুলো প্রতিদিনের পুষ্টি জোগায়, ত্বক, চুলের ক্ষয়রোধ করে, মুখের ভেতরের নরম অংশগুলোকে রক্ষা করে। মুখগহ্বরের ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
* ধনেপাতার ভিটামিন ‘এ’ চোখের পুষ্টি জোগায়, রাতকানা রোগ দূর করতে ভূমিকা রাখে।
* কোলেস্টেরলমুক্ত ধনেপাতা দেহের চর্বির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। আমাদের শরীরে এলডিএল নামে এক ধরনের খারাপ কোলেস্টেরল রয়েছে, যা শরীরের শিরা-উপশিরার দেয়ালে জমে হূৎপিণ্ডে রক্ত চলতে বাধা দেয়। পরিণামে হার্ট অ্যাটাক পর্যন্ত হতে পারে। ধনেপাতা এই খারাপ কোলেস্টেরলকে কমিয়ে দেয়। আর শরীরের জন্য উপকারী এক ধরনের কোলেস্টেরল, যার নাম এইচডিএল, মাত্রা বৃদ্ধি করে। ধনেপাতা শরীরের এইচডিএলকে বাড়িয়ে এলডিএলকে কমিয়ে দেয়।
* ধনেপাতায় উপস্থিত আয়রন রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে এবং রক্ত পরিষ্কার রাখতেও অবদান রাখে।
* এ ছাড়া ভিটামিন ‘কে’-তে ভরপুর ধনেপাতা হাড়ের ভঙ্গুরতা দূর করে শরীরকে করে শক্ত-সমর্থ। তারুণ্য ধরে রাখতেও এর অবদান অপরিসীম। তবে ধনেপাতা রান্নার চেয়ে কাঁচা খেলে উপকার বেশি পাওয়া যায়।
* ধনেপাতা শীতকালীন ঠোঁট ফাটা, ঠান্ডা লেগে যাওয়া, জ্বর জ্বর ভাব দূর করতে রাখে যথেষ্ট অবদান।
* ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’থাকায় দেহের কাটাছেঁড়া অংশগুলো শুকানোর জন্য ভীষণ জরুরি।
বি:দ্র:অধিক পুষ্টির আশায় মাত্রাতিরিক্ত ধনেপাতা খাওয়া অনুচিত।
কলমিঃ কলমী শাকে রয়েছে অনেক ওষধী গুণ।
-----------------------------------
১. যদি কারো ফোড়া এই কলমী পাতা তুলে একটু আদাসহ পাটায় বেটে ফোড়ার চারপাশে লেপে দিয়ে মাঝখানে খালি রাখতে হবে। তিন দিন এইভাবে লেপে দিলে ফোড়া গলে যাবে এবং পুঁজ বেরিয়ে শুকিয়ে যাবে।
২. বাগি বা ফোড়া উঠলে এই কলমী পাতা বেটে প্রলেপ দিলে বাগি মিশে যাবে।
৩. রাত কানা রোগ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই কলমী শাক কয়েক সপ্তাহ প্রতিদিন একবেলা ভাজি রান্না করে খেলে রাত কানা রোগ ভালো হয়।
৪. বাচ্চারা যদি মায়ের দুধ কম পায় সেইক্ষেত্রে কলমী শাক ছোট মাছ দিয়ে রান্না করে খেলে মায়ের দুধ বাড়বে এবং তখন বাচ্চা দুধ পাবে।
৫. কোষ্ঠ কাঠিন্য বা হলে কলমী শাক তুলে সেচে এক পোয়া পরিমাণ রস করে আখের গুড়ের সঙ্গে মিশিয়ে শরবত বানিয়ে সকাল-বিকাল এক সপ্তাহ খেলে ভালো উপকার পাওয়া যাবে।
৬. গর্ভাবস্থায় গর্ভবতি মায়েদের শরীরে, হাতে-পায়ে পানি আসে, সেই সময় কলমী শাক বেশি করে রসুন দিয়ে ভেজে তিন সপ্তাহ খেলে পানি কমে যাবে।
৭. গণরিয়া রোগ হলে প্রস্রাবের জায়গায় জ্বালা যন্ত্রণা করে। সেই সময় কলমীর রস করে ৩/৪ চামচ পরিমাণ ৩ সপ্তাহ খেলে ওই জ্বালা কমে যায়।
৮. হাত-পা বা শরীর জ্বালা করলে কলমী শাকের রসের সঙ্গে একটু দুধ মিশিয়ে সকালে খালি পেটে এক সপ্তাহ খেলে উপকার পাওয়া যায়।
৯. পিঁপড়া, মৌমাছি, বিছা বা কোন পোকা-মাকড় কামড়ালে এই কলমী শাকের পাতা ডগাসহ রস করে লাগালে যন্ত্রণা কমে যায়।
১০. আমাশা হলে কলমী পাতার রসের সঙ্গে আখের গুড় মিশিয়ে শরবত বানিয়ে সকাল-বিকাল নিয়মিত খেলে আমাশার উপশম হয়।
মুলাঃ
---------------
* ১০ গ্রাম শুকনো মুলা ৪ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে ১ কাপ হলে নামিয়ে ছেঁকে নিন। দিনে ৫ থেকে ৬ বার খান। আমাশয় ভালো হয়ে যাবে।
* এক থেকে দেড় গ্রাম মুলার বীজ চূর্ণ পানির সঙ্গে মিশিয়ে সকালে ও বিকেলে কিছু খাওয়ার পরে খান। ইউরিন ইনফেকশন থাকবে না।
* ছুলি রোগে ৫ গ্রাম মুলার বীজ পানি দিয়ে বেটে নিন। এই পেস্ট ত্বকে লাগান। ছুলি ভালো হয়ে যাবে।
গিমেঃ
----------
* চোখ উঠলে বা চোখ ব্যথা করলে গিমে পাতা দিয়ে সেক দিন।
* ১ চা চামচ গিমে পাতার রস এবং আধা কাপ আমলকী ভেজানো পানি মিশিয়ে খেলে বমি বন্ধ হয়ে যাবে।
* খাবারের রুচি বাড়াতে সকালে গিমে পাতার রস খান।
কচু শাকের পুষ্টিঃ
-------------------------
কচু একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিকর সবজি। এ দেশে কচু তেমন সমাদৃত নয় এবং অনেকটা অবহেলার দৃষ্টিতে দেখা হয়। অথচ কচু শাকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’, ক্যালসিয়াম, লৌহ ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এ শাক দুই প্রকার যথা :
(১) সবুজ কচু শাক ও
(২) কালো কচু শাক।
কচু শাকে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ থাকায় এ শাকের লৌহ দেহ কর্তৃক সহজে আত্তীকরণ হয়। প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান দেয়া ছাড়াও প্রাচীনকাল থেকে কচুকে বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। মুখী ও পানিকচুর ডগা দেহের ত রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া জ্বরের রোগীকে শরীরের তাপমাত্রা কমানোর জন্য দুধকচু খাওয়ানো হয়। ওলকচুর রস, উচ্চরক্তচাপের রোগীকে প্রতিষেধক হিসেবে খাওয়ানো হয়। আবার মান কচুর ডগা ও পাতা বাতের রোগীকে খাওয়ানোর প্রথা এ দেশের ঘরে ঘরে প্রচলিত রয়েছে। কচু শাকে পর্যাপ্ত আঁশ থাকায় এটি দেহের হজমের কাজে সহায়তা করে

No comments:

Post a Comment

Ad

Popular Posts